Sunday, July 26, 2020

রাজকন্যা :- ২য় পর্ব

রাজকন্যা :- ২য় পর্ব


ঢাকার জীবন শুরু আবার....
ভালোই চলছে কয়েক মাস বাদে প্রেমার ডিপ্রেশন এ পরে সিগারেট ধরলাম। বাসা ছিল মিরপুর ১২। রেগুলার বাস ভাড়া বাচিয়ে সিগারেট কিনতাম।
কিন্তু বেশি দিন সেই সিগারেট খাওয়ার ভাগ্য হয়নি। বাবা মা বুঝতে পেরেছে ছেলের সমস্যা আছে,ছেলে নস্ট হয়ে যাচ্ছে তাই মিরপুর ১২ তেই একটি স্কুলে ভর্তি করল ঠিক বছরের ৫ মাস বাকি থাকতে।

আমি তখনো হাইস্কুলে নিয়ম জানতাম না কারন ক্লাশ সিক্স কেটেছে আবাসিক ভাবে। যাইহোক নতুন স্কুল, নতুন বন্ধু। সব নতুন। ভাল ছিল স্কুলটা। ভর্তি রোল ছিল ৫৪ আর বার্ষিক পরীক্ষাতে আমার রোল হয় ৪।
তাই সকল ছাত্র-ছাত্রীদের এবং স্যারদের নজরে আসতে সময় লাগে নাই।

সাল ২০০৮,আমাদের নতুন বাসা নিল। আমিও ক্লাশ এইটে - ততো দিন পড়ায় ভাল মন দিয়েছি। কিন্তু রাসেল ভাই কয়লা ধুলে ময়লা যায় না আমিও সেম। আলু দোষ হিসাবে প্রেম রোগটায় আমার ছিল। ৪তালা বাসা, ঠিক সামনেই নিচ তলা বাসা। ভারতীয় সিনেমার কাজলের মত এক নায়িকা থাকত। যারে আস্তে আস্তে মনে ধরল। কিন্তু কাজল কে ভেবে ভেবে আমি যখন শাহরুখ হয়েছি ঠিক তখনি তার দুটা বাসা পরে ৪তালা তে আর একটা মেয়েকে দেখতে পায়।
এই বার নিজেকে সত্যি শাহরুখ মনে হলো- নাইলে কুছ কুছ হোতাহের মত ক্যান রানী চলে আসবে আপনি ভাবুন।যদিও তখনো আমি কুছ কুছ হোতাহে দেখি নাই তাই ফিনিসিং নিয়ে ভাবি নাই।

লক্ষ প্রেম করলেও কিন্তু ইমানের সাথে করছি। তাই চিন্তা করলাম কাজল আর রানীর মধ্যে একজন কে লাগবে। তাই খুব হিসাব করে মনের পছন্দ কে দাম দিলাম।

আমি কাজলকে বেছে নিলাম। এখানেও মজার ব্যাপার এরা দুইজনই আমার ক্লাশমেট। মানে ক্লাশ এইটের ছাত্রী ছিল। 😉
তাই কাজল কের ব্যাপারে খোজ নিলাম, সব ঠিক আছে মেয়ে সিংগেল,কোন দিন প্রেম করে নাই এবং সে বাড়িওয়ালার মেয়ে। ভাবছিলাম আমার মত ছেলে কে কি পাত্তা দিবে?

ভাবতে ভাবতেই ভ্যালেন্টাইন্স ডে। বলে রাখা ভাল আমার ফুফাতো সেম স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়তো। তাই ওরে দিয়ে ফুল দিলাম ১৪ ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু কাজ হলো না। ফুল নিল না- প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান😥

ওয়েট ওয়েট কি ভাবতেছেন আমি ক্লাশ সিক্সের প্রেমা কে ভুলে গেছি? আসলে না, কিন্তু প্রেমাকে পাওয়ার কোন রাস্তা ছিল না। তার ফোন নং ছিল না,ঠিকানা ছিল না। আমার বন্ধু গুলো পরের বছর চলে গিয়েছিল তাই আর কাউকে পাই নাই। আর আজ থেকে ১৪-১৫ বছর আগে যুগটা কেমন ছিল তা ভাবুন। অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু পাইনি প্রেমাকে। তাই আমি কাজলের প্রেম পরি।

কাজলকে যেভাবেই হোক রাজি করাতে হবে,এই লক্ষ্যে তার বান্ধবীদের সাথে প্রাইভেট পড়া শুরু করলাম তাদের নোট দিয়ে সহায়তা করতাম। ধীরে ধীরে সেও প্রাইভেট পরতে আসল। তাকেও সাহায্য এক দিন দুই দিন এভাবে ১০ দিন পর তাকে বললাম চলো আজকে পড়া শেষে ঘুরতে যায়। সে রাজি হলো। তারে আবার প্রোপজ দিলাম। এইবার সে বলল ভেবে দেখবে। সে ভাবতে ভাবতে আমি আর তার কথা ভাবতে পারছি না কারন তখন ধ্যানে জ্ঞানে আমি যে কাজলের কথায় শুধু ভাবি।

আপনাদের হয়তো মনে আসছে তখন কার সময় গুলোতে রাতে কারেন্ট গেলে পড়া বাদ দিয়ে আড্ডা দেওয়ার একটা অতিরিক্ত সময় পাওয়া যেত। সেই সময় আমরা রাস্তার মোরে মোরে আড্ডা দিতাম। এমনি একদিন দিনটা ছিল মার্চের কোন এক সোমবার রাতে কারেন্ট চলে গেলে আমিও বাহির হয়েছি,আমার কাজল আমাকে ডাকছে, আমার মনে তখন এক সাথে মনে হয় ৪ টা ৪ টা মোট ৮ টা লাড্ডু ফুটেছে।

কাজল আমাকে বলল যে সে গনিত পারে না তাই একটা অংক তারে যেন খাতায় করে দেয়।
কিসের লাড্ডু ফাড্ডু সব শেষ। কাজল কথা শেষ করে চলে গেল,আমি ২ টাকার বাদাম কিনে খাইতে খাইতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে গেলাম।

পরের দিন তারে ঠিকই অংক করে খাতা দিলাম আর খাতার মধ্যে কিছু বাক্য লিখলাম যার সবই ছিল উপন্যাস থেকে চুরি করা।

এর মধ্যে আমি গনিতে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে ক্লাসে খুব জনপ্রিয় হয়ে যায়। সবাই খুব মিল দিতে আসে। পরিচয় হলো কিছু ব্যাকবেঞ্চারের সাথে। তাদের সাথে মিলে স্কুল লাইফ খুব ইনজয় করছি। একদিন বোটানিক্যাল গার্ডেন তো পরের দিন বাংলা স্কুলের সামনে দাড়িয়ে মেয়ে দেখা। তার পর হয়তো স্কুল ফাকি দিয়ে বেড়ি বাধ। আর অন্য দিকে আমার কাজলের প্রেমে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি।

কাজল ৯৯% রাজি হয়ে গেছে ঠিক তখনি আমার বন্ধু দের কুচক্রে বাজি ধরে একটা মেয়ে কে প্রেমে প্রস্তাব দিলাম।
যা হওয়ার ছিল তাই হলো। মেয়ে এসে আমার কাজল কে বলে দিল। কাজল আমাকে ডাকলো। গেলাম চুপ করে দাড়িয়ে আছি। বকা দিল সেই দিন আমি প্রথম তার হাত ধরি, হাত ধরে কান্না করে দিয়ে তারে বুজালাম।

সেও ক্ষমা করে দিয়ে আমার ভালবাসার নৌকায় উঠে বসলো। ভালই চলছিল, ২য় পার্বিক পরীক্ষায় আমি ২য় হলাম। তাই বাসা থেকে পড়া নিয়ে চাপ দিত না। আর এই দিকে আমি কাজল কেও পেয়েছি।সব যেন স্বপ্নের মত করে চলছে।
আমার বন্ধু সংখ্যাও বাড়ছে, নতুন বন্ধু আমিন। একদিন আমিনদের ঐদিকে ক্রিকেট খেলে বাসায় আসার সময় আমিন দের বাসায় যায়। সবার সাথে পরিচয় পরে একবারে শেষে তার নানার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো,জানতাম না তার নানা হাত দেখতে পারে।

প্রথম দেখায় আমার হাত দেখতে চাইল। আমিও দেখালাম।দেখে বলল নানু তুমি কি নতুন প্রেম করেছো?
আমিতো অবাক!! বলাম হ্যা,কিন্তু কেন?
বলে মেয়ে কি আমার সামনে আনতে পারবে? বললাম হ্যা।
আচ্ছা নানু ভাই কাল নিয়ে আইসো আমি একটু দেখব।
ঐ দিন বাসায় ফিরে রাতে আর ঘুম হলো না
কখন সকাল হবে?? কখন নিয়ে যাবো? এসব ভাবতে ভাবতে ঘুম