Sunday, August 9, 2020

গল্প--দ্যি ব্লাড মিস্ট্রি।

গল্প--দ্যি ব্লাড মিস্ট্রি।
লেখক-- আবরার আহনাদ তালহা।( গল্প লেখক)
পর্ব--৪(মেগা পর্ব)
___________

বিকেল ৩টা ৫০ মিনিট। রিরা নিজের এপার্টপেন্টের বাইরে দাড়িয়ে আছে। তালহার জন্য অপেক্ষা করছে সে। একটা সিরিয়াস খুনকে কোন ঘটনার উপর ভিত্তি করে তালহা আত্মহত্যা বা দূর্ঘটনা দাবি করছে সেটা জানার জন্য সে বর্তমানে ব্যকুল হয়ে আছে। তার জন্য সে তালহার বলে দেওয়া সময়ের থেকে ১০ মিনিট আগে থেকেই তার জন্য বাইরে দাড়িয়ে গালে হাত দিয়ে অপেক্ষা করছে। রিরা বেশ ভালো ভাবেই জানে তালহা এমন একটা যুক্তি দাড় করাবে যেটাকে মিথ্যা প্রমান করা অসম্ভব হবে। তবুও সে জানতে চায় কি এমন যুক্তি দাড় করায় সে।তার এসব ভাবনার ভিতর ছেদ ঘটায় একটা লাল সিডনি গাড়ির হর্নের শব্দে। দূর থেকে দেখেই চিনে ফেলে সে। তালহার গাড়ি ওটা। গাড়িটা রিরার পাশে এসে থামে। রিরা নিঃসংকোচে ভিতরে ঢুকে পরে।

ড্রাইভিং সিটের দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠলো রিরা। তালহার বদলে সেখানে বসে আছে ওর চাকর মাসুদ। নিজের ৩২ টা দাত নাচিয়ে রিরার দিকে তাকিয়ে আছে মাসুদ। এটাকে দেখলেই রিরার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। একে তো এরকম বিশ্রি একটা নাম তার উপর কেমন করে যেনো গা জ্বলানো একটা হাসি দেয়। দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় রিরার। ধমকের স্বরে বলে,

--" এই তুই এখানে কী করছিস? তালহা কোথায়?"
--" মেডাম আপনে রাগ করতাছেন কে? স্যার যে কই আমি তো তা জানি না। স্যার আমারে খালি কইলো আপনার বাসার সামনে থেকে আপনাকে নিয়ে স্ট্রিট রোডে থাকা স্যার এর ক্যাফেতে যেতে।"
--" ও আচ্ছা ঠিকাছে। এখন চুপচাপ গাড়ি চালা। "

কথাটা বলেই রিরা ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে গুতাতে থাকে । রিরার কথার জবাবে মাসুদ একটা গা জ্বলানো হাসি দিয়ে গাড়ির এক্সেলারেটরে চাপ দিলো। হালকা ঝাকি দিয়ে গাড়িটা তার নিজ বেগে চলতে শুরু করলো। মিনিট বিশেকের মধ্যেই স্ট্রিট রোডে থাকা তালহার ক্যাফেতে পৌছে গেলো ওরা । খুব বেশি বড় না ক্যাফেটা।

অনেক বড় বড় কাচ দিয়ে ঘেরা। বাইরে থেকে ভিতর টা না দেখা গেলেও ভিতর থেকে বাইরের দৃশ্যটা খুব ভালো ভাবেই দেখা যায়। রিরা ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেলো, কাচের দেয়ালটার পাশে এক কাপ কফি হাতে গম্ভির ভাবে বাইরে তাকিয়ে বসে আছে তালহা। রিরা হেঁটে গিয়ে ওর সামনের চেয়ার টায় বসে পড়লো। সাথে সাথে তালহা টেবিলে কফির কাপটা রেখে দাড়িয়ে গেলো। রিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
--" বসলি কেনো? চল। "

কথাটা বলেই তালহা ক্যাফের দরজার দিকে এগোতে লাগলো। এটা দেখে রিরা একেবারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। ওকে ডেকে কিনা নিজেই চলে যাচ্ছে ! কিন্তু রহস্যটা জানতে হলে এগুলো সহ্য করতেই হবে এখন রিরাকে । মনে মনে তালহাকে বেশ কিছু গালি দিয়ে সেও ক্যাফের বাইরে বেরিয়ে এলো। লাল সিডনিটার দিকে এগিয়ে গেলো। ড্রাইভিং সিটের দিকে তাকিয়ে দেখলো তালহা বসে আছে। সেও কিছু না বলে ভিতরে ঢুকে সিটবেল্ট বেধে নিলো। রিরার দিকে একবার তাকিয়ে এক্সেলারেটরে চাপ দিল তালহা। হালকা প্রতিবাদ করে গাড়িটা চলতে শুরু করলো। কিছুক্ষন নিরবতার পর তালহা বলে উঠলো ,

--'হাবিব সাহেবের গার্ডদের নেতা গতকাল আমাকে যা বলেছে তা হলো, হাবির সাহেব প্রায় ২ মাস যাবত মানসিক ভাবে অসুস্থ। মানে হতাশায় ভুগছেন। তার স্ত্রী বেশ অনেকদিন আগেই তাকে অপমান করে অন্যদেশে চলে যায়। সাথে তার সন্তান কেও নিয়ে যায়। এরপর থেকেই মূলত হাবিব সাহেব হাতাশায় ভুগছেন। কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েও সামান্য সুখের খোজে ছিলেন উনি। টাকার জোরে নিজের শারীরিক চাহিদা পূরন করতে পারলেও পরিবারের সাথে হাসি ঠাট্রার মূহুর্তগুলো তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে থাকে। প্রায় দিন পনেরো আগে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কিন্তু মানসিক ভাবে দুর্বল হওয়ার কারনে পারেন নি। আবার একাকিত্বের এই জীবনটাও তিনি রাখতে চান না।

দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে চেয়েছিলেন কিন্তু প্রতিটা মেয়েই মানা করে দেয় এরকম একজন বুঁড়োকে বিয়ে করতে। এই কারনে হতাশাটাও আরো বেরে যায়। শেষে মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়াকেই উচিৎ মনে করলেন তিনি। বডিগার্ডদের প্রধান রাতুলকে একজন অনেক বড় ডাক্তারের খোজ করতে বলেন। রাতুল কথামতো একজন বড় মাপের ডাক্তারের খোজ নিয়ে আসে।

 যে ডাক্তারের খোজ নিয়ে আসে সে হচ্ছে ড. মারুফ। তুই ক্যাফেতে আসার মিনিট পাঁচেক আগেই ড. মারুফ বেরিয়ে গিয়েছেন। আমিই ডেকেছিলাম উনাকে । কথাও বললাম। ড. মারুফ জানালেন যে, হাবিব সাহেব উনাকে এমন একটা ঘুমের ঔষধ দিতে বলেন যেটা খেলে কমপক্ষে দুই দিন উনি ঘুমিয়ে থাকতে পারেন। আর একটা ঔষধ দিতে বলেন যেটা খেলে আর কখনো রক্ত জমাট বাধতে পারবে না।

সেই সাথে ড. মারুফকে তার পার্সনাল ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বাহানাও বানান। প্রথমে দিতে না চাইলেও পরে টাকার লোভে ঔষধ গুলো দিয়ে দেন ড.মারুফ। সাথে পার্সনাল ডাক্তার হতেও রাজি হন। গতকাল রাতে উনার হাবিব সাহেবের ওখানে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু তার ছেলের হঠাৎ করে অসুস্থ হওয়ায় উনি যেতে পারে নি। কিন্তু ঔষধ গুলো পাঠানোরও দরকার ছিলো। তাই তিনি এক ছোকরাকে দিয়ে ঔষধ গুলো পাঠিয়ে দেন আর হাবিব সাহেবের দেওয়া টাকাটাও নিয়ে আসতে বলেন। কিন্তু চালাক ছেলেটা ঔষধ ঠিকই দিয়েছে কিন্তু হাবিব সাহেবের দেওয়া টাকা নিয়ে ভেগে গিয়েছে। আর কোনো খোজ নেই তার। এই ঘটনা শুনার পর নিশ্চয়ই খুব সহজেই বুঝতে পারা যায় যে পরে কী কী ঘটেছে। তাই না?"

কথাটা বলেই তালহা রিরার দিকে তাকায়। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছে সে তালহার দিকে। চোখে বিস্ময়। ভ্রু দুটো যতটা সম্ভব ততোটা কুচকানো। মনে হচ্ছিলো কোনো এক ঘোরের ভিতর আছে সে। তালহা রিরার এই অবস্থা দেখে একটা মুচকি হাসি দেয়। তাতেই রিরার ঘোর ভেঙ্গে যায়। কিছু একটা ভেবে নিয়ে বলে উঠে ,
--" এরপর নিশ্চয়ই হাবিব সাহেব সেই ঔষধ গুলো খেয়ে নিয়েছিলো। তারপর একটা পিন দিয়ে নিজের হাতে সুন্দর করে একটা ছিদ্র করে যেনো রক্তগুলো সেখান থেকে বেরিয় যেতে পারে। এরপর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েন চির জীবনের মতো। ঠিক না?"

--" হুম একেবারে ঠিক।"
রিরা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
--"অকট্য যুক্তি। "

জবাবে তালহা শুধু একটা মুচকি হাসি দিলো। রিরা তালহার থেকে চোখ সরিয়ে গাড়ির জানালার বাইরে তাকালো। তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। তারা পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় আছে। এখানে এলো কখন ! এটা তো তাদের শহরের পাশের পাহাড়ি এলাকা। রিরা বাইরের প্রকৃতি দেখতে দেখতেই তালহাকে জিজ্ঞাস করলো,
--" আমরা কোথায় এসেছি রে ?"

--" অনেক দিন হলো একসাথে কোথাও যাওয়া হয় না । এবারের কেসটাও অনেক তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো। তাই আজকে এখানে ঘুরতে আসলাম। সেই কবে এসেছিলাম। আর আজকের এই স্নিগ্ধ বিকেলটা শুধুই আমাদের । কী বলিস?"
রিরা তালহার দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো। তালহা একবার দেখেই বুঝে ফেলল কী হতে যাচ্ছে এখন। গাড়িতে হালকা করে ব্রেক কষে রিরার দিকে তাকালো সে। রিরা বলে উঠলো ,
--"তুই ঠিকই বলেছিস অনেক দিন ধরে এক সাথে কোথাও যাওয়া হয় না। আর আজকের এই বিকেলটা শুধুই আমাদের। "
কথাটা বলেই রিরা তালহার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। তালহা বেশ ভালো ভাবেই জানতো এরকমটাই হবে। তাই সেও প্রস্তুত ছিলো এটা সামলানোর জন্য। বেশ কিছুক্ষন ঝড়ের পর পরিবেশটা শান্ত হলো। রিরা গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। এতো উচু থেকে নিচের দিগন্ত বিহীন বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমিটা অসাধারন লাগছিলো। রিরা বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো। একটা টিস্যু দিয়ে ঠোটের চারপাশে লেপটে থাকা রিরার লিপবামটুকু মুছতে মুছতে রিরার পাশে এসে দাড়ালো তালহা। রিরা হালকা করে তালহার হাতটা ধরলো। তারপর কাধে মাথা রাখে সামনের দিকে শুন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো।আর তালহা রিরার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। শান্ত বিকেলের হালকা বাতাসে রিরার চুলগুলো উড়ছিলো।

" একটা পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের দেশে আপনি আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির সাথে একা একা বসে নিচের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে গল্প করছেন। কী চাই আর এই জীবনে?" কথাটা মনে হতেই তালহা হালকা মুচকি হাসি দিলো। বেশ কিছুক্ষন পর হঠাৎ রিরা কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো,
--"আমাদের আর বিকেলটা উপভোগ করা হলো না রে।"

--" কেনো?"
রিরা নিজের আঙুলের ইশারায় কিছু একটা দেখিয়ে বলল,
--"নতুন কেস হাজির।"
তালহা হালকা বিরক্তি নিয়ে রিরার আঙুল অনুসরন করে পাহাড়ের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটার দিকে তাকালো। আর তাতেই চমকে উঠলো। বিস্ময়ে বলে উঠলো,
--"ও মাই গড
চলবে----

[ নতুন লেখালেখি করছি। তাই ভুল ত্রুটি অনেক থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ সেগুলো ধরিয়ে দিবেন। আর আপনার দু লাইলের একটা মন্তব্য আমাকে দুশো লাইন লেখার অনুপ্রেরনা দেয়। । গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।]